ব্ল্যাক ওয়ার বাংলা মুভি রিভিউ | Black War Bangla Full Movie Review

ব্ল্যাক ওয়ার বাংলা মুভি রিভিউ | Black War Bangla Full Movie Review

বাংলাদেশের কোন মুভি বের হইলে একটা শ্রেণীর দর্শক রুপি ভাড়াটিয়া বাহিনী একটা ডায়লগ সার্কুলেট করা শুরু করে যে বাজেট ছিলো না তাই মুভি এমন হইছে , মিশন এক্সট্রিম রিলিজের পরেও এমন কিছু পোস্ট এবং কমেন্ট দেখা গেছে। সিনেমা রিলিজের আগেই নায়ক আরিফিন শুভ বললেন আমরা অনেক লিমিটেশন নিয়ে সিনেমা তৈরি করি তাই কে জি এফ, ত্রিপল আর এর সাথে তুলনা করার প্রশ্ন আসে না। অবশ্য তিনি সেভাবে ব্যাখ্যা করেন নাই কোন লিমিটেশন, সেটা কি স্কিলের লিমিটেশন, রিসোর্সের লিমিটেশন নাকি ফান্ড। অনেকে আবার দেখি বলা শুরু করেছেন বাজেট বড় কথা নয় নির্মাতার স্কিল টাই বেশি জরুরি। এমতাবস্থায় সাধারণ দর্শক হিসেবে কোন মতবাদে যাব?

এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বলার আগে আমি দুইটা সিনারিও দেই, কিছুদিন আগে প্রভাস অভিনীত ওম রাওত পরিচালিত সিনেমা আদিপুরুষ এর ট্রেলার আসে, এই সিনেমার বাজেট প্রায় ৭৬০ কোটি টাকা বা ৬৯মিলিয়ন ডলার। এমন ফ্যান্টাসি জনরাতেই গত বছর হলিউডে একটা সিনেমা রিলিজ হয়েছে এভ্রিথিং এভ্রিহয়ার……… যার বাজেট ১৫৭ কোটি টাকা বা ১৪.৩ মিলিয়ন। আদিপুরুষ ট্রেলার বের হবার পর দর্শকের রেসপন্স এতই নেতিবাচক ছিলো যে নির্মাতারা সিনেমা আবার নতুন করে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়, অন্যদিকে এভ্রিথিং এভ্রিহয়ার……… আয় করেছে ১১৩৩ কোটি টাকা বা ১০৪ মি ডলার। যেহেতু আদিপুরুষ সিনেমা বের হয় নাই তাই দুইটার মাঝে কম্পেয়ার করা পসিবল না, তবে জাস্ট দুইটার ট্রেলার দেখে আসুন।

কেন এই উদাহরণ দিলাম? নিজেরা একটু বের করার চেষ্টা করেন, আমি এর মাঝে সিনেমার বেসিক বাজেট নিয়ে একটু আলোচনা করি।

ধরেন আপনি একজন লেখক আপনি একটা সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখেছেন এবং আপনার এই স্ক্রিপ্টের উপর এতই কনফিডেন্স যে আপনার মনে হয়েছে আপনি পরিচালনাও করতে পারবেন এবং আপনি মোটামুটি একজন ইনভেস্টর ও জোগাড় করে ফেলেছেন, কিন্তু ইনভেস্টর জানতে চেয়েছে আপনার কত টাকা লাগবে এই মুভি বানাইতে এবং এ থেকে আমি কি রিটার্ন পাব?

আপনি ইনভেস্টরের কাছে যাওয়ার আগে মাথায় একটা আইডিয়া নিয়ে গেছেন যে আমার এত টাকা হইলে আমি মুভি বানাইতে পারব।

বাজেট বের করার ক্রাইটেরিয়া গুলো কি?

কাস্টিং

লিড রোলে:

কাস্টিং:

এক্সট্রাসঃ

টোটাল কাস্টিং বাজেট = xyz

প্রোডাকশন

প্রি প্রোডাকশন

সিন

কতগুলো লোকেশন?

আউটডোর সিন কয়টা?

ইন্ডোর সিন কয়টা?

অন-লোকেশন কয়টা

স্টেজিং সিন কয়টা

একশন সিন?

কয়টা কম্বেট সিন

কয়টা এক্সপ্লোশন সিন

কোন কার চেস সিন আছে কিনা

কোন সিজিআই বা ভিএফএক্স ব্যবহার করা লাগবে নাকি।

গান

ক্যামেরা সেটয়াপ পার সিন।

ক্যামেরা ক্রু

সিঙ্গেল ক্যামেরা

ডাবল ক্যামেরা

এডিশনাল ড্রোন বা বডি ক্যাম।

লাইটিং ক্রু

কতদিন শুটিং হবে?

দিন প্রতি প্রোডাকশন ক্রু

ফুড

ট্রান্সপোর্ট

টোটাল প্রোডাকশন কস্ট = xyz

ফিক্সড সেলারি,

পরিচালক

এসিস্টেন্ট ডিরেক্টর

সিনেমেটোগ্রাফার

প্রোডাকশন ডিজাইনার

কোরিওগ্রাফার

কস্টিউম ডিজাইনার

একাউন্টস

এডমিন

টোটাল এডমিন কস্ট= xyz

পোস্ট প্রোডাকশন

এডিটিং

সিজিআই

টোটাল বাজেট = xyz

মার্কেটিং(মিনিমাম ১৫% অফ টোটাল বাজেট)

(এগুলোর বাইরেও অনেক কিছু থাকে আমি জাস্ট মাথায় এখন যা আসছে তা উল্লেখ করলাম)

পরিচালকের যদি এই বিষয় গুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ ধারনা থাকে সে একটা বলপার্ট ফিগার বের করতে পারে, ধরেন আপনার সিনেমার বাজেট দাঁড়ায় ৪ কোটি টাকা। এখন আবার ইনভেস্টর জানতে চাইছে রিটার্ন কি হবে?

আপনি তাই একজন ডিস্ট্রিবিউটর খুঁজে বের করলেন তারে বললেন আপনার সিনেমায় কি থাকবে সে সব শুনে বলল ভাই আমার হাতে ৪০ টা হল আছে, প্রথম সপ্তাহে ৬০% দর্শক ও দ্বিতীয় সপ্তাহে ৪৫% ধরলে আপনাকে আমি ৪ কোটি দিতে পারব।

এবার আপনি ইনভেস্টর কে গিয়ে বললেন ভাই এই হইল আমার মুভি এইটা হইলে এত টাকা সেল হবে, ত ইনভেস্টর বলল যদি ৪ কোটি আসে তাইলে বাজেট ত আরো কম দিতে হবে নাকি? ইনভেস্টর বলল ভাই আমি ২.৫ কোটি দিব তুমি দেখ পার নাকি মুভি বানাইতে।

এইখান থেকেই পরিচালকের আসল ক্রিয়েটিভটি শুরু হয়। কারণ উপরে যে তালিকা দিয়েছি এখন পরিচালক কে এখানে এডজাস্টমেন্ট শুরু করতে হবে। পরিচালক তার গল্পকে কিভাবে উপস্থাপন করতে চায় সেটা যত ভালো ধারনা রাখবে তার এডজাস্টমেন্ট তত ভালো হবে। যেমন প্রধান কাস্ট এ কোন পরিবর্ত করতে পারবে না, কারণ এই কাস্ট দেখেই ডিস্ট্রিবিউটর তাকে এস্টিমেশন দিয়েছে। তাহলে এডজাস্টমেন্ট কোথায় হবে? প্রোডাকশন আর এডমিন কস্ট।

ধরুন এই মুভিটা ১২০ মিনিটের রানটাইম যেখানে ৮-৯ টা সিকোয়েন্স প্রতি সিকোয়েন্সে কমবেশি ৬ টা সিন মানে ৪৮টা সিন একশন সিনেমাতে সিন বেশি থাকে তাই ধরে নিলাম ৫০+। এই সিন গুলোর মাঝে কিছু পরিচালক বাছাই করবে কোন গুলোকে মডিফাই করা যায় ধরুন ৩ টা ব্লাস্ট সিন আছে সেখানে কতটুকু ক্রিয়েটিভলি দেখিয়ে কস্ট কমানো যায়। কারণ আপনি ৪ ফুট ব্লাস্ট করেন আর ৪০ ফুট, এটা চিত্রনাট্যের কোন পরিবর্তন করবেনা, শুধু গল্পের টেক্সার পরিবর্তন করবে।

এখন এত সব হিসাব করার পর যখন মুভি বানানো হইলে হলে গিয়ে দেখা গেল নায়ক টয়োটা করলা চালাচ্ছে। বেশির ভাগ দর্শক এটা নিয়ে কথা তুলবে না, কিন্তু দেখা গেলো নায়ক লেক্সাস গাড়ি চালাচ্ছে কিন্তু ক্যামেরার ফোকাল লেন্থ ঠিক নাই, ডায়লগ শেষ হবার আগে সিন কাট হয়ে যাচ্ছে, গান এর প্লেসমেন্ট ঠিক নাই তখন ত সেটা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করবেই।

এবার আসি মিশন এক্সট্রিম এর বিষয়ে, অনেকেই বলছে লিমিটেশন ছিলো সিনেমার কলাকুশলীরাও বলছে লিমিটেশন ছিলো, তাহলে এই মুভি দুই পার্টে কেন দেখানো হইল? কি এমন গল্প ছিলো যা এক পার্টে হইত না? দুবাই গিয়ে শুট করা হইছে, কেন? দুবাই সিকোয়েন্সে যা দেখানো হয়েছে তা কি রাজস্থানে করা যাইত না? ঢাকায় শুট করা হইছে ফ্ল্যাটে দুবাই গিয়েও একই কাজ করছে, এমন না যে দুবাইয়ের কোন মনুমেন্ট কে টার্গেট করে কোন সিকোয়েন্স রাখা হইছে যা না থাকলে চিত্রনাট্যে হ্যাম্পার হইত। এখানেই পরিচালকের ক্রিয়েটিভ ডিসিশনের বিষয়। 

বাজেট বাচানোর একটা উদাহরন দেই মুন্না ভাই এম বি বি এস সিনেমাতে সিনেমার শেষে কিছু স্টিল ছবি দেখানো হয়, মুন্না আর সুমন এর বিয়ে, সার্কিটের ফ্যামিলি ফোটো, আরো কিছু স্টিল পিকচার, তো যখন হিরানি তার প্রোডাকশন ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করে এই ছবি গুলো তুলতে কত টাকা লাগবে, ম্যানেজার বাজেট দিল ৪০ হাজার রুপি, কারণ গ্রেসিকে বউ সাজাইতে হবে, পেছনে বিয়ের স্টেজ লাগবে, ত হিরানি করল কি যেখানে তারা শুট করত সেখানে একটা কমিউনিটি সেন্টার ছিলো যেখানে প্রায়ই বিয়ে হইত, ত সেন্টারের ম্যানেজার কে ডেকে বলল যে এর পর যেদিন বিয়ের অনুষ্ঠান হবে সেদিন আমাকে জানাবা। ব্যাস তার প্রোডাকশন খরচ বেচে গেলো।

একশন সিনেমায় বাজেট অনেক বড় একটা বিষয়। এতে কোন সন্দেহ নেই, যত বড় ব্লাস্ট দেখাবে স্পিড কার চেস সিকোয়েন্স দেখাবে দৃশ্যের সৌন্দর্য ততই বাড়বে, কিন্তু এই চেস সিকোয়েন্স যদি এমন হয় যে একটা ফ্রেমে ৩ টা মোটর সাইকেল দেখা যাচ্ছে আরেক ফ্রেমে একটা গাড়ি, কে যে কার পিছনে ওয়াইড শটে তা দেখাচ্ছে না, হঠাত করে কেউ একজন গুলি খেয়ে মরে গেলো, দর্শক হিসেবে কোন ধারনাই পেলাম না কি হচ্ছে পর্দায় এইরকম কোরিওগ্রাফি রেখে কি লাভ? না সিনেমার সৌন্দর্য বাড়ল না দর্শকের মন ভরল।

হ্যাঁ আমাদের রিসোর্সের অভাব আছে, কিন্তু একটা চিত্রনাট্যে লিখতে ত আর রিসোর্স লাগে না, নায়ক লেক্সাস বাদ দিয়ে টয়োটা করলা তে চললে আমরা বুঝব কিন্তু জঙ্গলের মধ্যে নায়িকা ২ দিন ধরে আটকে আছে আগের দিন রাতে ঝড় হয়েছে কিন্তু পরদিন সকালে পুরা টিপটপ সেজে একদম আয়রন করা কস্টিউম পরে নায়কের পাশে হাটতেছে এইটা ত গ্রহণ করা পসিবল না।

আদিপুরুষের নির্মাতাদের আপনি ৬৯ মিলিয়ন ডলারের যায়গায় ১৩০ মিলিয়ন ডলার দিলেও কোন লাভ হবে না, কারণ তারা চরিত্রের উপস্থাপনাতেই ভুল করে বসেছে। তাই বাজে ভিএফএক্সের জন্য যতটানা ট্রল হয়েছে তার চাইতে বেশি নেগেটিভ মন্তব্য পেয়েছে চরিত্র গুলোর সাজ সজ্জার জন্য।

ছোট করে লেখতে চাইছি তাও বড় হয়ে গেছে তাই দুঃখিত, আসলে এইটা এত বড় একটা বিষয় যেটা কম কথায় শেষ করা পসিবল না।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url